
বেগম জিয়াকে যেকয়টি শর্তে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে এর মাঝে তিনটি প্রধান শর্ত হচ্ছে-
- তাকে নিজ বাসভবনে অবস্থান করতে হবে।
- চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোন হাসপাতালে যাওয়া যাবে না।
- চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে পারবেন না।
আপনারা হয়তো অনেকেই এডলফ হিটলারের নাৎসি বাহিনী অথবা ‘লৌহমানব’ খ্যাত নিষ্ঠুর শাসক জোসেফ স্ট্যালিন নতুবা বঙ্গবন্ধুর রক্ষীবাহিনীর নির্মম নিপীড়ন ও বিভীষিকার গল্প শুনেছেন। বর্তমান রোলিং পার্টির প্রধান কর্তৃক আমি কিছুটা তেমনই ফ্লেভার পাচ্ছি।
মানুষের জীবনধারণের মৌলিক অধিকার গুলো হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। এছাড়াও বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে নাগরিক অধিকার নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন মৌলিক অধিকারের কথা বলা আছে। অধিকার গুলোর মাঝে- আইনের দৃষ্টিতে সমতার অধিকার, বৈষম্যহীন অধিকার, জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার, স্বাধীন চলাফেরার অধিকার, চিন্তা, বিবেক ও বাক্স্বাধীনতার অধিকার, গৃহ ও যোগাযোগের অধিকার অন্যতম। আবার বলা আছে কেউ যদি এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে সে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে রিট করার অধিকার তার রয়েছে।
এখন মূল প্রসঙ্গে আসুন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় যে সন্ত্রাসী, সেও এইসব মৌলিক অধিকার গুলো পাবার পূর্নাঙ্গ অধিকার রাখে। রাষ্ট্র কখনই কোনো সন্ত্রাসীর বাসস্থান বা চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকার অকার্যকর বা নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা রাখে না। সেখানে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্টের স্ত্রী বেগম জিয়াকে মিথ্যে মামলায় ২ বছর দেড়মাস আটকিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে বেগম জিয়ার বয়স বিবেচনা করলেই তিনি জামিনের যোগ্য ছিলেন, সেখানে তাকে পরিকল্পিতভাবে আটকিয়ে রেখে রাষ্ট্র বেগম জিয়ার অনেক গুলো মৌলিক অধিকার খর্ব করেছে।
সংবিধানের একটি সুন্দর অনুচ্ছেদ হচ্ছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। কিন্তু সেই সবাইয়ের মাঝে যদি রোলিং পার্টির কেউ থাকে, তাহলে সেই আইন হয়তো নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, এমন কিছু সংযুক্ত করা প্রয়োজন। নতুবা যারা ক্ষমতাসীন দলের হাজার হাজার কোটি টাকার দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে আছে, তারা উন্মুক্ত আকাশের বাতাস খাওয়ার কথা ছিলো না। যারা গত ১০ বছরে ৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে, যারা প্রতিবছর দুটি করে পদ্মা সেতু বাইরে পাচার করে দিচ্ছে, যারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নামে তিন হাজার কোটি টাকার হরিলুট করেছে, যে সমস্ত দরবেশ বাবারা শেয়ারবাজার ধ্বংস করেছে, যে সমস্ত তথ্যবাবারা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ গায়েব করে দিয়েছে, তারাও আজ জেলে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু ভাগ্যবশত, তারা সবাই পার্লামেন্টের ওলি-আওলিয়াদের বংশধর।
রাষ্ট্র খুব অদ্ভুতভাবে, সেই সমস্ত কালপিটদের স্বাধীনভাবে চলতে দিলেও মাত্র দুই কোটি টাকার মিথ্যে মামলায় বেগম জিয়াকে বছরের পর বছর কারাগারে রেখে, রাষ্ট্র তার সংবিধান কঠোর হস্তে পালন করছে। এবং রাষ্ট্রের নায়িকা বরাবরের মতই সাংবাদিক সম্মেলনে দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের যে থিওরি আমাদের দিয়ে আসছে, তার সাথে বাস্তবের আদৌ কি কোনো মিল আছে?
এরপরেও আমরা তার পানে চেয়ে থাকি কারন তিনি কখনও মরবেন না, তাকে কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে না, তিনি চিরকাল তার রাজত্ব এইভাবে চালিয়ে যাবেন।
বেগম জিয়াকে তাঁর নিজ বাসভবনে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এর আরেক মানে হচ্ছে রাষ্ট্র তাঁর গৃহ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পাবার যে অধিকার তা খর্ব করেছে, বেগম জিয়াকে পিজি হাসপাতাল ছাড়া অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা না দেওয়ার আরেক মানে হচ্ছে রাষ্ট্র তাঁর চিকিৎসা পাবার যে মৌলিক অধিকার তা খর্ব করেছে, বেগম জিয়াকে বিদেশ যেতে বাঁধা দেওয়ার আরেক মানে হচ্ছে রাষ্ট্র তাঁর স্বাধীন চলাফেরার যে অধিকার তা খর্ব করেছে।
আমি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না। তবে একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র বেগম জিয়ার যেসকল মৌলিক অধিকার অকার্যকর বা খর্ব করেছে, আমি এর তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানাই। সেইসাথে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- ইংল্যান্ডের
স্বৈরাচার অলিভার ক্রময়েল তার অধীনস্থদের অধিকার খর্ব করার পর, যখন তিনি মারা গেলেন তার মৃত্যুর ১০ বছর পর তার বিচার হয়েছিল। বিচারে রায় দেওয়া হয়েছিল তার কবর থেকে হাড়গোড় উঠিয়ে ফাঁশিতে ঝুলানোর জন্য এবং পরে তার কবর থেকে তার হাড়গোড় তুলে ফাঁশিতে ঝুলানো হয়েছিল। তার মাথার খুলি জনসম্মুখে অনেকদিন টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছিল, পরে সেটি লন্ডনের সাসেক্স কলেজে সমাহিত করা হয়েছিল।
কেউ কেউ মরে গিয়েও অমর হয়ে যায়, কেউ কেউ চোখের এত কাছে থাকার পরও বিলীন হয়ে যায়। খোদা হাফেজ।
©️ MD Sazibur Rahman Sajib | 25.3.2020 | China